রফিক মাহমুদ, উখিয়া:

মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আবারও নতুন ভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটছে। রাখাইন রাজ্যের বুচিডংয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুতে মাইন বিস্ফোরনে ৩জন রোহিঙ্গা নিহত ও ২জন আহতের ঘটনায় আতংকিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া রাখাইন রাজ্যে নানা সমস্যার পাশাপাশি খাদ্য ও কর্মসংস্থানের সংকটে পড়ে এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত দেড় শতাধিক পরিবারের ছয় শতাধিক রোহিঙ্গা উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন।

বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে নবাগত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন স্থানে বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়ন উজাড় করে পাহাড় কেটে ঝুপড়ি ঘর বানাতে দেখা গেছে। অনেককে পূর্বের আশ্রিত আত্মীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। নাইচা প্রু থেকে মঙ্গলবার ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে আসা হাসান আলী (৪৭) জানায় গত বছরের ৯ অক্টোবরের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সেনা ও আধা সামরিক পুলিশ বাহিনী যাকে যখন যেখানে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আটককৃতদের কাছে দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলে বিজিবি ও সেনা বিওপি আক্রমনের ঘটনাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী মামলায় নির্যাতন করে কারাগারে চালান দিচ্ছে।

মংডুর লোদাইং থেকে আসা ইমাম শরিফ (৪০) জানান গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে মাঠে চাষাবাদের কাজ করার কালে মাইন বিস্ফোরনে একই ঘরের দুই জনসহ তিন জন রোহিঙ্গা নিহত হয়। এ ঘটনায় অপর একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় মংডুর হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে জানায় কথিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ঘায়েল করতে সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে মাইন পুঁতে রেখেছে। অথচ এসব মাইন রোহিঙ্গারা পুঁতেছে মর্মে হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের আটক করা হচ্ছে। ফলে নির্যাতন ও গ্রেপ্তার এড়াতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। সীমান্তের প্রায় আধা কিলি:মিটারের মধ্যে হওয়ায় উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গারা সহজে আশ্রয় নিতে পারছে বলে স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গা নেতারা জানায়।

বালুখালী বস্তির এ-৬ ব্লকের আবু তাহের মাঝি জানান তার ব্লকে গত ১ সপ্তাহের মধ্যে ১৫ পরিবারের মত নতুন আগত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। জি-ব্লকের হোছেন মাঝি জানায় একই সময়ের ব্যবধানে বুচিডং জেলায় মাইন বিস্ফোরন ঘটনায় সেখান থেকে ৮/১০ পরিবার চলে এসেছে। সে জানায় তার ব্লকে গত ৫ দিনে ৪৭ পরিবার নতুন আসা রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এরা খাদ্য, আবাসন ও চিকিৎসা সংকটে রয়েছে বলে জানা গেছে। মংডুর কিয়াং মং, কাটাখালী, লোদাইং, নাইচা প্রুসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল বুধবার পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার নতুন ভাবে এসে আশ্রয় নিয়েছে। অধিকাংশ আত্মীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিলেও কেউ কেউ নতুন ঝুপড়ি ঘর তুলতে শুরু করেছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানায়। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারী মোঃ নুর জানান, নানা সমস্যা, নির্যাতনের পাশাপাশি রাখাইনে চলতি বর্ষা মৌসমে চরম খাদ্য ও কর্ম সংস্থানের সংকট চলছে। ফলে রোহিঙ্গাদের কিছু লোক নতুনভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত কয়েকদিনে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে ৮/১০ পরিবারে প্রায় শ’খানেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে সে জানান।

বালুখালীর সাবেক ইউপি মেম্বার সেলিম জাহাঙ্গীর, পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদে ভুট্টো, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে বলেন, প্রথম থেকে এলাকার অবস্থা বিবেচনায় বালুখালীতে রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের বিপক্ষে থাকলেও ক্ষতিপয় প্রভাবশালীর স্বার্থাম্বেষী মহলের ইন্ধনে রোহিঙ্গা শিবির হওয়ায় এলাকার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, সীমান্তের বিজিবিসহ অনেকে নিয়োজিত থাকার পরও কিবাবে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে তা বলা কঠিন। বিশেষ করে বালুখালীতে গজে উঠা রোহিঙ্গা শিবিরের কারনে স্থানীয় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তিনি জানান।